কালকেই বোঝা যাবে ম্যাচের আসল রং

মেহেদি হাসান মিরাজ

ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯ উইকেট হাতে নিয়ে ৮৮ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন শেষে ভালো অবস্থায় বাংলাদেশই। তাই তৃতীয় দিনটিকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ বলেন, ‘অবশ্যই, আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত আমাদের পক্ষেই আছে ম্যাচ। আশা করি কালকে ভালো করব। কালকের দিনটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ব্যাটসম্যানরা সবাই দায়িত্ব নিয়ে ভালো খেলতে পারি এবং একটা বড় লক্ষ্য দিতে পারি অস্ট্রেলিয়াকে তবে তাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে।’

অস্ট্রেলিয়াকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলতে কত রান টার্গেট হওয়া উচিত, এমন প্রশ্নের উত্তরে মিরাজ বলেন, ‘আসলে এই উইকেটে আমরা যত রানই করি, আমরা লড়াই করতে পারব। প্রথম ইনিংসে দেখেছেন যে ২৬০ রান করেছি। পরবর্তীতে ২১৭ রানের মধ্যে আটকে দিয়েছি তাদের। আমাদের এখনও অনেক ব্যাটসম্যান আছে। কালকে ব্যাটিং করতে পারবে। যে রানই হোক, ওইটা নিয়ে আমরা লড়ব। সুনির্দিষ্ট বলতে পারব না যে ৩০০-৪০০ লাগবে। আসলে সুনির্দিষ্ট কিছু নেই। আমাদের লক্ষ্য অনেক বড় স্কোর গড়া। সুযোগ থাকলে যত বেশি সম্ভব আমরা করব। তবে দেখেছেন যে এই উইকেটে আমরা যদি ৩০০ প্লাস রান করতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে।’

ব্যাট হাতে ৮৪ রান করার পর বল হাতে ৬৮ রানে ৫ উইকেট নেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। তাই সাকিবের প্রশংসা করলেন মিরাজ, ‘সাকিব ভাই তো তিনটি সংস্করণেই অলরাউন্ডার হিসেবে দাপট দেখাচ্ছেন। ভালো লাগে যে নিজেদেও দেশের এমন একজন আছে, এমন একজন অলরাউন্ডারের সঙ্গে খেলতে পারছি। খুব ভালো লাগে। তার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা সবাই জানি সাকিব ভাই অনলি ওয়ান। আমার কাছে খুব ভালো লাগছে যে উনি এত রেকর্ড গড়ছেন আর আমি তার সঙ্গে খেলছি। অনেক অভিজ্ঞতা উনি ভাগাভাগি করেন আমাদের সঙ্গে।’

ঢাকা টেস্টের উইকেট নিয়েও কথা বলেছেন মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, ওরকম পার্থক্য বা আহামরি কিছু না। একই রকম আছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আমাদেও বোলাররা খুব ভালো বোলিং করছে। উইকেট যে রকমই হোক না কেন, বোলাররা ভাল জায়গায় বোলিং না করলে উইকেট পাওয়া অনেক কঠিন। সাকিব ভাই কিন্তু অসাধারণ বোলিং করেছেন। তারপর আমি, তাইজুল অবদান রেখেছে। মুস্তাফিজ উইকেট পায়নি, কিন্তু খুব ভালো বোলিং করেছে। রান নিয়ন্ত্রণ করেছে। উইকেট যেরকমই হোক, বোলাররা দায়িত্ব নিয়ে ভালো জায়গায় বল করে তাহলে ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে যায়।’

দিনের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে শিকার করেন মিরাজ। স্মিথের উইকেট শিকার নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘অবশ্যই ভালো লেগেছে তার উইকেট শিকার করে। বিশ্বেও সেরা কয়েকজন ব্যাটসম্যানের মধ্যে স্মিথ একজন। তার জন্য একটি পরিকল্পনা ছিল। আগের দিন যখন একটা বল করেছিলাম,তখন মুশফিক ভ্ইা বলেছিলেন, স্মিথকে যদি রাউন্ড দা উইকেটে ভালো জায়গায় বল কতে পারিস, তাহলে সে আটকে যায়। সেভাবে খেলতে পারে না, পায়ের ব্যবহার করতে পারে না। সামনে এগিয়ে খেলে। সেক্ষেত্রে অনেক সময় বল টার্ন করে স্টাম্প হওয়ার সুযোগ থাকবে, ক্যাচ আউট হওয়ার সুযোগ আসবে। আমি মুশফিক ভাইয়ের কথামতোই করার চেষ্টা করেছি। রাউন্ড দ্য উইকেটে জায়গামতো করেছি, সেটি কাজে লেগেছে।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানে অলআউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। যার মাধ্যমে বড় ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে অসিদের সর্বনিম্ন স্কোরের নতুন রেকর্ড তৈরী হলো।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার আগের সর্বনিম্ন স্কোরটি ছিলো ২৬৯ রানের। ২০০৬ সালে ফতুল্লা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো অসিরা। শেষ পর্যন্ত টেস্টটি ৩ উইকেটে জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া।

নবম উইকেটে আগার-কামিন্স নবম জুটির নয়া রেকর্ড
টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে নবম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যাস্টন আগার ও প্যাট কামিন্স। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিন ১৪৪ রানে অস্ট্রেলিয়ার অষ্টম উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন আগার ও কামিন্স। তারা ৪৯ রানের জুটি গড়েন।
এরপর বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে স্কোর বোর্ডে রান জড়ো করতে থাকেন তারা। শেষ পর্যন্ত এই জুটিকে বিচ্ছিন্ন করেন বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। ২৫ রান করে ফিরেন কামিন্স। আউট হবার আগে আগারের সাথে ৪৯ রানের জুটি গড়েন কামিন্স। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে নবম উইকেট সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড।

অবশ্য দলীয় ১৬৬ ও ব্যক্তিগত ১১ রানে থাকতে ক্যাচ দিয়েছিলেন কামিন্স। সাকিবের বলে সেই ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশের পেসার শফিউল ইসলাম।
নবম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার আগের রেকর্ডটি ছিলো ৩৯ রানের। ২০০৬ সালে ফতুল্লা টেস্টে নবম উইকেটে জুটি বেধে ৩৯ রান করেছিলেন এডাম গিলক্রিস্ট ও স্টুয়ার্ট ক্লার্ক।