সেবা বলতে টিকাদান!

দক্ষিণ গোড়ানের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র–২–এ চলছে চিকিৎসাসেবা। ছবিটি গতকাল সকালে তোলা l প্রথম আলোশিশু মিরাজকে টিকা দিচ্ছিলেন প্যারামেডিক। টিকা দেওয়ার পর কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে বিষয়ে শিশুর মা মুকুল আক্তারকে জানাচ্ছিলেন তিনি। এরপর তিনি কক্ষে অপেক্ষমাণ আরেকটি শিশুকে টিকা দেন।
গত শনিবার দক্ষিণ গোড়ানের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-২-এর প্যারামেডিকের কক্ষে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস প্রজেক্টের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র এটি।
কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, শনিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মোট ৮০ জন সেবা নিয়েছে। তার মধ্যে ৫৬টি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ২৪ জন নারী গর্ভকালীন সেবা অথবা পরামর্শ নিয়েছেন। অর্থাৎ শনিবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই টিকা নিতে এসেছে। তবে শনিবার কোনো পুরুষ চিকিৎসা নিতে আসেননি।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফাতেমা আক্তারের দেওয়া তথ্যমতে, এই ওয়ার্ডে কমবেশি পাঁচ লাখ মানুষের বাস। তাঁদের কম খরচে এবং দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা দিতেই নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা।
তবে স্থানীয় অনেক বাসিন্দা বলেন, শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্যই মূলত তাঁরা সেখানে যান। এর বাইরে অন্য সেবা নিতে চান না। তবে নবদম্পতি ও গর্ভবতী নারীরা প্রাথমিক পরামর্শ বা সেবা নিতে আসেন।
এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবার মান নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নয়। এ ছাড়া এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর তাঁদের আস্থাও কম।
নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কয়েকটি ভবন পরেই বিউটি বেগমের বাসা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে সমস্যা নিয়েই যাই, একই চিকিৎসা, টেস্ট। এ জন্য টিকা ছাড়া অন্য কোনো সমস্যায় যাই না।’ একই কথা বলেন স্থানীয় আনিসুল হক। তিনি মেয়ের টিকা দিলেও অন্য কোনো সেবার জন্য নিজে বা পরিবারের কাউকে নিয়ে যান না। এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘ঠিকমতো ডাক্তার থাকে না। আবার ভরসাও পাই না।’
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত একজন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু শনিবার তিনটা পর্যন্ত সেখানে চিকিৎসক ছিলেন না। তাই প্যারামেডিক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রোগীকে পরে আসার জন্য বলে দিচ্ছেন। এমন একজন রোগী ২১ বছর বয়সী ফারজানা আক্তার। তিনি রবির বাড়ি বস্তি থেকে এসেছেন গর্ভকালীন রুটিন পরীক্ষার জন্য। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাঁকে পরের দিন আবার আসতে হবে।
চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে পিএ-৫-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাজেদুল হক বলেন, চিকিৎসক ছুটিতে আছেন। চিকিৎসক ছুটিতে গেলে পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক একজন সমন্বয়ক সাময়িক সহায়তা দেন। কিন্তু তিনি না আসায় চিকিৎসক ছাড়াই চলছে।
চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়ার পর তিনটার দিকে একজন চিকিৎসক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাধারণত নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসাসেবা নেয়। ৩০ শতাংশ রোগীকে লাল কার্ডের মাধ্যমে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। মধ্যবিত্তরাও কমবেশি আসেন। তবে টিকা নেওয়ার জন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষই আসে।
প্যারামেডিক শাহানারা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সমস্যা কাছাকাছি। তাদের বেশির ভাগই অপুষ্টির শিকার। এ ছাড়া শরীরে হিমোগ্লোবিনও কম থাকে। এর মূল কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহ ও দারিদ্র্য।
এখানে একজন পরামর্শদাতা (কাউন্সেলর) আছেন, যিনি নানা বিষয়ে রোগীদের পরামর্শ দেন। পরামর্শদাতা ফারজানা কায়সার বলেন, এখানে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে বেশি আসেন নব দম্পতিরা। শিশুদের খাদ্যতালিকা নেওয়ার জন্যও অনেক মা আসেন। এ ছাড়া গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী মায়েদেরও পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হাকিম মজুমদার বলেন, অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে মানুষের আস্থা হয়তো কম। তবে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য একজন চিকিৎসক যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে আরেকজন চিকিৎসক নিয়োগের সুযোগ নেই। তাই চিকিৎসক ছুটিতে গেলে কিছু সমস্যা হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৪৫ টাকায় টিকিট নিয়ে চিকিৎসাসেবা নেওয়া যায়। বাজারমূল্য থেকে ১০ শতাংশ কম মূল্যে ওষুধ কেনার সুবিধা আছে এখানে। পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও আছে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মূলত প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, শিশু স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক রোগসমূহ নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সেবা, সাধারণ রোগসমূহের চিকিৎসা, নির্যাতনের শিকার নারীদের সহায়তাসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়।

আরও সংবাদ

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা