মা! দেখা হবে জান্নাতে, রোহিঙ্গা কিশোরের বিদায়বেলার উক্তি

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গারা। তিলে তিলে নির্মমভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উল্লাস করে মারছে রাখাইন সৈন্যরা। প্রবাদ আছে বিপদে পড়লে বিড়ালও গাছে উঠে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটছে না। আর কত সহ্য করবে তারা? ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে তাদের। চোখের সামনে নিজের মা আর বোনের সম্ভ্রমহানী। সহ্য করা যায়? মানবতার ধ্বজাধারীরা যখন, দর্শকের ভূমিকায়। বিশ্ব মোড়লরা আজ দেখেও অন্ধ, শুনেও বধির।
২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের দমনের নামে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সে দেশের সেনাবাহিনী ও রাখাইন যুবকদের যৌথ হত্যাযজ্ঞে পাঁচ শতাধিকরেও বেশি নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলিম শিশুসহ নারী পুরুষকে হত্যা করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে তছনছ করে দেয়া হয়েছে বসত ঘর ও ধন সম্পত্তি। এখনো অব্যাহত রয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ।
বিবিসি রিডিওতে এক মা সাক্ষাৎকারের সময় বলেন, তার ১৪ বছরের ছেলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের স্বাধীন করার জন্য দেশে রয়ে গেছেন। বিদায়ের সময় বলেছে, মা! দেখা হবে জান্নাতে। কান্না জড়িত কন্ঠে এ কথাগুলো বলছিলেন মা।
নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞের পর রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা অন্তত ৮ হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আরো কয়েক হাজার মানুষ সীমান্তে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব মতে, অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে বাড়িছাড়া করা হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
আয়েশা বেগম নামে এক গর্ভবতী নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এএফপি। তিনি এখন বাংলাদেশে একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। আয়েশা বলেন, ক’দিনের মধ্যেই তিনি তার ৬ষ্ঠতম সন্তানের জন্ম দেবেন। কিন্তু এসময়টি স্বামী কাছে না পেয়ে তার খারাপ লাগছে না। কারণ তার স্বামী তাদের সাথে পালিয়ে না এসে আরাকানে থেকে গেছেন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।
চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আয়শা তার স্বামীর ব্যাপারে বলেন, ‘সে আমাদেরকে (স্ত্রী-সন্তান) নাফ নদীর পাড়ে এনে দিয়ে গেছে। বিদায় জানানোর সময় সে বলেছে, তুমি বাংলাদেশে যাও, যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে শিগগরিই তোমাদের সাথে স্বাধীন আরাকানে দেখা হবে। আর বেঁচে না থাকলে আমাদের দেখা হবে জান্নাতে।
Comments