আসুন, বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই
‘সারা দেশে বন্যায় ৩৭ জনের মৃত্যু, ২ হাজার স্কুল বন্ধ’; ‘১ লাখ হেক্টরের ফসলের ক্ষতি, বোরোর পর বন্যায় আমনও গেল’; ‘ফরিদপুর ও গোয়ালন্দে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত’; ‘চোখের সামনেই ভাঙছে মর্জিনাদের ঘর’; ‘মোহনপুরে বাঁধ ভেঙে পানির নিচে অর্ধশত গ্রামের ফসল’; ‘বালিয়াডাঙ্গী গ্রামে পদ্মার ভাঙন চলছেই’; ‘কুড়িগ্রামে বন্যায় রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’; ‘এবার দিনাজপুর থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ’; ‘সিরাজগঞ্জে বন্যায় ২১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ’- তিন দিনে বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনাম এগুলো। সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতি বোঝার জন্য এ শিরোনামগুলোই যথেষ্ট। এবারের বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা আসলে অপূরণীয়। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত জনজীবনকে একেবারে নাকাল করে দিয়েছে। দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। উত্তরের জনপদ অচল বলা চলে। পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা অর্থাৎ উত্তরের সব জেলা প্লাবিত হয়েছে। দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতি বাজে আকার ধারণ করেছে। বগুড়ার কিছু অংশে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী সিরাজগঞ্জ প্লাবিত হয়েছে। তার মানে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত।
উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। এবারের বন্যায় কৃষক যে সব হারিয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ যে পরিমাণ পাওয়ার কথা, তা এখনও পৌঁছেনি। এসব এলাকার জমির ফসল গেছে, গেছে পুকুরের মাছও। বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে, তা সহজেই পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এবারের অকাল বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের অনেক দিন সময় লেগে যাবে। শুধু বন্যা নয়, অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধস, নদীভাঙনসহ দেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কয়েক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থনীতিবিদ এবং কৃষিবিদরা মনে করছেন। এ মৌসুমের প্রাক-বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কৃষির যে ক্ষতি হয়েছে, তা ছিল স্মরণাতীতকালের মধ্যে ভয়ংকর। ফলে হাওরবাসী আজ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগের সম্মুখীন। দেশের মোট জনসংখ্যার আট ভাগের এক ভাগ বসবাস করেন হাওরাঞ্চলে। এ হাওরাঞ্চলের অর্ধেকের বেশি মানুষের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। একের পর এক হাওরের ফসল যখন তলিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে ধানের পচন থেকে অ্যামোনিয়া জাতীয় সৃষ্ট গ্যাসে দেখা দিল মাছের মড়ক। উপার্জনের দ্বিতীয় যে উপায়টি দরিদ্র হাওরবাসীর সামনে খোলা ছিল, তা-ও বন্ধ হয়ে যায়।
মাত্র একদিনে ৯০ পয়েন্টের মধ্যে ৮১টির পানি বেড়েছে। এর মাঝে ১৭ পয়েন্টের পানি অতিক্রম করেছে বিপদসীমা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও তিন দিন পানি বাড়তে পারে। আগস্টে হয়ে থাকা বন্যা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে বলা হয়, এবারের বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একদিনে এভাবে একসঙ্গে এত নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে কোনোক্রমেই স্বাভাবিক বলা যায় না। এখন ভারি বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টি কমে গেলেও এ পানি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসতে লেগে যাবে দীর্ঘ সময়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যা এখনও যমুনা-সুরমাবেষ্টিত আছে। যে কোনো সময় তা ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনার দিকে ধাবিত হতে পারে। ওই তিন নদীর যে কোনো দুইটির পানি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে সারা দেশই বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে।
এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। উজানের ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া জেলার কয়েকটি স্থানসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর ফ্লাড ওয়ালের আউটলেট দিয়ে পানি প্রবেশের কারণে নওগাঁ শহরের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরের বন্যাকবলিত মহল্লাগুলোর রাস্তাসহ বাড়িঘরে পানি ঢোকায় এসব এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অপরদিকে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারে পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। এ জেলার ৯ উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সুতরাং এ মুহূর্তে কালবিলম্ব না করে সরকারকে বন্যা মোকাবিলায় আগাম সতর্ক হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে এবং আগামীর জন্য স্থায়ী বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিকল্পনাসহ এগিয়ে আসতে হবে। বন্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকরা বলেছেন, নদী তার স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজের গভীরতাকে হারিয়ে ফেলেছে; পানি ধারণ ক্ষমতাও হারিয়েছে। আর এ ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরাও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছি। এ কারণে ডুবছে রেলপথ, সড়ক ও জনপদ; পুড়ছে কপাল, কাঁদছে মানুষ। বিত্তবানদের উচিত সাধ্যমতো তাদের কাছে অন্ন, বস্ত্র পৌঁছে দেয়া; তাদের থাকার ব্যবস্থা করা। আমরা যেন তাদের ভাই কিংবা বোন মনে করি। কারণ আজ যারা এমন দুর্ভোগের শিকার, এমনও হতে পারে আগামীকাল আমাদের পালা। তাই ছোট-বড়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই মিলে তাদের পাশে দাঁড়াই। এখন আপন চিন্তা ভুলে গিয়ে আসুন ভাবি অসহায় সেই বন্যার্ত মানুষের কথা। চোখ খুলে দেখি নিরীহ অসহায় মা-বোনদের দিকে। মানবতার পরিচয় দিই। এ পরিস্থিতিতে দুর্যোগকবলিত এলাকায় নিজ নিজ সাংগঠনিক কমিটির উদ্যোগে বানভাসি মানুষের পাশে থেকে তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া আমার-আপনার নৈতিক দায়িত্ব।
উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। এবারের বন্যায় কৃষক যে সব হারিয়েছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ যে পরিমাণ পাওয়ার কথা, তা এখনও পৌঁছেনি। এসব এলাকার জমির ফসল গেছে, গেছে পুকুরের মাছও। বাংলাদেশের অর্থনীতির সার্বিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে, তা সহজেই পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এবারের অকাল বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে আমাদের অনেক দিন সময় লেগে যাবে। শুধু বন্যা নয়, অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধস, নদীভাঙনসহ দেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কয়েক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থনীতিবিদ এবং কৃষিবিদরা মনে করছেন। এ মৌসুমের প্রাক-বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কৃষির যে ক্ষতি হয়েছে, তা ছিল স্মরণাতীতকালের মধ্যে ভয়ংকর। ফলে হাওরবাসী আজ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগের সম্মুখীন। দেশের মোট জনসংখ্যার আট ভাগের এক ভাগ বসবাস করেন হাওরাঞ্চলে। এ হাওরাঞ্চলের অর্ধেকের বেশি মানুষের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন বোরো ফসল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। একের পর এক হাওরের ফসল যখন তলিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে ধানের পচন থেকে অ্যামোনিয়া জাতীয় সৃষ্ট গ্যাসে দেখা দিল মাছের মড়ক। উপার্জনের দ্বিতীয় যে উপায়টি দরিদ্র হাওরবাসীর সামনে খোলা ছিল, তা-ও বন্ধ হয়ে যায়।
মাত্র একদিনে ৯০ পয়েন্টের মধ্যে ৮১টির পানি বেড়েছে। এর মাঝে ১৭ পয়েন্টের পানি অতিক্রম করেছে বিপদসীমা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরও তিন দিন পানি বাড়তে পারে। আগস্টে হয়ে থাকা বন্যা সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে বলা হয়, এবারের বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একদিনে এভাবে একসঙ্গে এত নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে কোনোক্রমেই স্বাভাবিক বলা যায় না। এখন ভারি বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টি কমে গেলেও এ পানি স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসতে লেগে যাবে দীর্ঘ সময়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যা এখনও যমুনা-সুরমাবেষ্টিত আছে। যে কোনো সময় তা ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনার দিকে ধাবিত হতে পারে। ওই তিন নদীর যে কোনো দুইটির পানি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে সারা দেশই বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে।
এদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। উজানের ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢল এবং কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নওগাঁ, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া জেলার কয়েকটি স্থানসহ উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর ফ্লাড ওয়ালের আউটলেট দিয়ে পানি প্রবেশের কারণে নওগাঁ শহরের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহরের বন্যাকবলিত মহল্লাগুলোর রাস্তাসহ বাড়িঘরে পানি ঢোকায় এসব এলাকার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। অপরদিকে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারে পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। এ জেলার ৯ উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের প্রায় চার লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সুতরাং এ মুহূর্তে কালবিলম্ব না করে সরকারকে বন্যা মোকাবিলায় আগাম সতর্ক হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে এবং আগামীর জন্য স্থায়ী বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থার পরিকল্পনাসহ এগিয়ে আসতে হবে। বন্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকরা বলেছেন, নদী তার স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজের গভীরতাকে হারিয়ে ফেলেছে; পানি ধারণ ক্ষমতাও হারিয়েছে। আর এ ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরাও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছি। এ কারণে ডুবছে রেলপথ, সড়ক ও জনপদ; পুড়ছে কপাল, কাঁদছে মানুষ। বিত্তবানদের উচিত সাধ্যমতো তাদের কাছে অন্ন, বস্ত্র পৌঁছে দেয়া; তাদের থাকার ব্যবস্থা করা। আমরা যেন তাদের ভাই কিংবা বোন মনে করি। কারণ আজ যারা এমন দুর্ভোগের শিকার, এমনও হতে পারে আগামীকাল আমাদের পালা। তাই ছোট-বড়, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই মিলে তাদের পাশে দাঁড়াই। এখন আপন চিন্তা ভুলে গিয়ে আসুন ভাবি অসহায় সেই বন্যার্ত মানুষের কথা। চোখ খুলে দেখি নিরীহ অসহায় মা-বোনদের দিকে। মানবতার পরিচয় দিই। এ পরিস্থিতিতে দুর্যোগকবলিত এলাকায় নিজ নিজ সাংগঠনিক কমিটির উদ্যোগে বানভাসি মানুষের পাশে থেকে তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া আমার-আপনার নৈতিক দায়িত্ব।
খবরটি পঠিত হয়েছে ১৪০০ বার
Comments