লালুর সঙ্গে ভুলু ফ্রি




বেশ আদর-যত্ন চলছে গরুটির। ক্রেতারা দরদাম করতে এলেই গায়ে হাত বুলিয়ে দেন ওর মালিক শাহ আলম। এত যত্ন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই বছর ধইর‍্যা পালতাছি। খড়-ভুসি ছাড়া কিছুই খাওয়াই নাই। দেখছেন না কি সুন্দর আমার লালু।’
লালুর দাম কত? জিজ্ঞেস করতেই শাহ আলম বলেন, ‘অর পুরো গায়ের রং লাল। গরুটায় কোনো খুঁত নাই। তাই দাম চাইতাছি আড়াই লাখ টাকা। এই দামে কিনলে ভুলুকে ফ্রি দিয়া দিমু।’
ভুলু কোথায় আছে? জানতে চাইলে ছোট একটি গরুকে লালুর পাশে বেঁধে দিলেন। লালুর মতো ভুলুও লাল রঙের। দেখতে ছোট হলেও ভুলু আর লালু একই বয়সী। এ কথা জানিয়ে শাহ আলম বলেন, ‘ভুলু আর লালুর বয়স দুই বছরের বেশি হইব। দুইটা গরুরই চাইর দাঁত। বাছুর অবস্থায় এই দুইটারে কিনছিলাম। ভুলু হচ্ছে ভুইট্টা জাতের গরু। এইডা আর বাড়ব না। ছোটই থাকব।’
আড়াই লাখ টাকার কম দামে লালু বিক্রি হলে ভুলুকে আর ফ্রি দেবেন না বলে জানান মাদারীপুরের শিবচর থেকে আসা এই খামারি। সে জন্য ভুলুর দাম রাখবেন ৫০ হাজার টাকা।
আজ বুধবার গাবতলী পশুর হাটে বেড়িবাঁধের পাশে শামিয়ানার নিচে মোট ১১টি গরু রেখেছেন শাহ আলম। তবে একটিও বিক্রি হয়নি।
ঈদের সময় যত এগিয়ে আসছে, গাবতলী পশুর হাটে কোরবানির গরুর সংখ্যা বাড়ছে। ক্রেতারাও আসছেন। দাম যাচাই-বাছাই করছেন তাঁরা। তবে ব্যবসায়ীরা যেমন দাম কমাচ্ছেন না, তেমনি ক্রেতারাও দামের সঙ্গে গরুর আকারে সন্তুষ্ট হচ্ছেন না। এই দুইয়ে সমন্বয় না হওয়ার বেচাকেনাও জমে উঠছে না।
মানিকগঞ্জের শিবালয় থেকে আসা বাচ্চু মিয়া নামে এক খামারির দাবি, খাবারসহ লালন-পালনে খরচ বেশি হওয়া তাঁরা দাম কমাতে পারছেন না। এর সঙ্গে ভারতীয় গরু চলে আসায় তাঁদের লোকসান গুনতেই হচ্ছে।লালু-ভুলু নামে দুটি গরুর দাম একসঙ্গে পড়বে আড়াই লাখ টাকা। ছবি: কমল জোহা খান
সাজসজ্জাতেও বিক্রি হয়নি ‘কালা বাবু’
কুষ্টিয়া থেকে শনিবার গাবতলীতে এসেছিল ‘কালা বাবু’। ১৩ লাখ টাকা দাম হাঁকিয়েছেন গরুটির মালিক ফারুক হোসেন। তবে ক্রেতারা দাম শুনে উল্টো দিকে হাঁটা দিচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার ‘কালা বাবু’র গলা-ঘাড়ে মালা পরানো হয়েছে। তারপরও বিক্রি হচ্ছে না।
আজ দুপুরে ফারুকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আটটি গরু এবার বাড়ি থেকে আনছি। সব গরুই বড় আকারের। এর মধ্যে কালা বাবু সবচেয়ে বড়। ওর ওজন ৩২ মণ। যদি চাঁদ রাত পর্যন্ত থাকি, তাহলে গরুগুলোর পেছনে আমাদের খরচ হবে সোয়া এক লাখ টাকা। কাস্টমারে যে দাম কইতেছে, তাতে অর্ধেকও দাম পাব না।’
হরিণের মতো দেখতে যে ষাঁড়
শিং দুটি বড়, লালের সঙ্গে ছোপ ছোপ সাদা রং। ভারতীয় এই গরুটি ছয় মাস ধরে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নিজের খামারে বড় করেছেন মো. শাহজাহান নামের এক ব্যবসায়ী। বিশাল আকারের ষাঁড়টির দাম তিনি চাইছেন সাড়ে চার লাখ টাকা। তাঁর কাছে রয়েছে ১১টি গরু। সব গরুই ভারতীয়। শাহজাহান বলেন, ‘রঙের জন্যই দেখতে সুন্দর। হের লইগ্যা দাম বেশি। ভারত থেকে আসা গরুটি টাঙ্গাইলের হাট থেকে আড়াই লাখ টাকায় কিনছিলাম। এরপর এই গরু ছয় মাসে পালতে খরচ হইছে ৬০ হাজার টাকা। ঢাকায় আনারও খরচ আছে। এখন তো আর লোকসান দিতে পারমু না।’
লালের মধ্যে সাদা রঙের গরুটির দাম সাড়ে চার লাখ টাকা। ছবি: কমল জোহা খান
ছোট গরুর দাম বেশি
ছেলেকে নিয়ে গরু কিনতে এসেছেন শাহ আলম নামের এক ক্রেতা। ৬৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে একটি মাঝারি আকারে গরু কেনার ইচ্ছে তাঁর। শাহ আলম বলেন, ‘যে ধরনের গরু কেনার ইচ্ছে, তার দাম দ্বিগুণ চাইছেন ব্যবসায়ীরা। এখন হাট ঘুরে দেখছি। মিললে কিনব, না হলে চলে যাব।’
গাবতলী বেড়িবাঁধের সামনে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি গরু নিয়ে আছেন কয়েকজন বিক্রেতা। তাঁদের দাবি, একটি গরু থেকে মাংস মিলবে দেড় মণ। দাম চাইছেন ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা। দাম শুনে এক ক্রেতা হাসতে হাসতে বললেন, ‘এই গরু ২০ হাজার টাকা হলে পোষাবে। দেড় মণ মাংস অসম্ভব।’


Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য