সকালে আক্ষেপ, বিকেলে আনন্দ



দুর্দান্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্টাম্প ভেঙে দিলেন সৌম্য সরকার। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ক্রিজে ফিরতে পারলেন না উসমান খাজা। রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত, খাজা রানআউট। শেষ বিকেলে অস্ট্রেলিয়া হারাল তাদের দ্বিতীয় উইকেট l শামসুল হক১০ রানে ৩ উইকেট হারানো বেশি বেদনার, নাকি ১৪ রানে প্রতিপক্ষের ৩ উইকেট পাওয়ার আনন্দ বেশি? দুটি এমনই বিপরীত মেরুর ব্যাপার যে একটির সঙ্গে আরেকটির তুলনা একটু কঠিন। কিন্তু মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের সকালের বেদনা আর শেষ বিকেলের আনন্দের মধ্যে বোধ হয় একটা তুলনামূলক রেখাচিত্র আঁকা যায়। সেখানে শেষ বিকেলের আনন্দটাই বেশি নম্বর পাবে। কারণ এই আনন্দ দিচ্ছে আরও বড় আনন্দের হাতছানি।
টেস্টের প্রথম দিন শেষেই এত দূরের ভবিষ্যৎ কল্পনা করা ক্রিকেটীয় চিন্তার সঙ্গে যায় না। কিন্তু দিনের সেরা ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান যখন এসে বলে যান, ‘এখন পর্যন্ত যা হলো, তাতে মনে হয় না টেস্টটা পাঁচ দিন যাওয়ার সম্ভাবনা আছে;’ তখন কে জিতবে, কে হারবে প্রশ্নটাও আসে। প্রথম দিনের পর সেই সম্ভাবনায় বাংলাদেশের পাল্লাই ভারী দেখছেন সাকিব এবং অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩ উইকেট নেওয়া নাথান লায়ন। আর এটা সম্ভব হচ্ছে শেষবেলায় বাংলাদেশি বোলারদের ওই কীর্তির সৌজন্যে। সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আশাবাদ শোনালেন দ্বিতীয় দিনের বোলিং নিয়েও, ‘একটু তো চাপে (অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা) থাকবেই। কারণ উপমহাদেশে ওদের সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো নয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের উইকেট শ্রীলঙ্কা বা ভারতের চেয়ে আলাদা। ওরা কেউই বাংলাদেশে টেস্ট খেলেনি। সুতরাং যতই অনুশীলন করুক বা প্রস্তুতি নিক; সহজ নয় কিন্তু।’
শেষবেলার সাফল্য বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে ঢেলেছে সঞ্জীবনী। ৯ ওভারের পরিকল্পনা কাজে লেগে যাওয়ায় আশা জেগেছে, অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলা যাবে আরও। দ্বিতীয় দিনে পরিকল্পনা থাকবে আগের দিনের মতোই—ভালো জায়গায় বল করে যাওয়া। সাকিবের ভাষায়, ‘উইকেট পাওয়া না-পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু ভালো জায়গায় বোলিং করাটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। চেষ্টা থাকবে সেটাই ঠিকভাবে করার।’
সাকিব-মিরাজদের লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। সর্বশেষ ভারত সিরিজে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। সাকিবও মনে করছেন, ‘স্মিথ বিশ্বের এক বা দুই নম্বর ব্যাটসম্যান। ওর রেকর্ডই ওর হয়ে কথা বলে। সর্বশেষ ও যখন ভারতের হয়ে খেলেছে, কয়েকটা সেঞ্চুরি করেছে। ওর মতো বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানকে বোলিং করা বিরাট চ্যালেঞ্জ।’
চ্যালেঞ্জের মধ্যে তিনি পড়েছিলেন কালও। সেটা ব্যাট হাতে। তামিমের সঙ্গে যখন জুটি বাঁধেন, বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের তখন ভগ্নদশা। দলের মাত্র ১০ রানের মধ্যে ফিরে যান সৌম্য, ইমরুল ও সাব্বির। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উইকেটও হয়ে উঠছিল ব্যাটিং প্রতিকূল। এর মধ্যেই চতুর্থ উইকেটে দুজনের ১৫৫ রানের জুটি, বাংলাদেশের ইনিংস বেঁচে যায় মহাবিপর্যয় থেকে। ওই সময়ে ফিরে গিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমাদের জুটিটা খুব জরুরি ছিল ম্যাচের জন্য।’
দুজনের অভিষেক কাছাকাছি সময়ে। ৫০তম টেস্ট খেলছেন একসঙ্গেই। সতীর্থ হিসেবেও সাকিব-তামিমের বোঝাপড়া বেশ ভালো। ব্যাটিং অর্ডারের কারণে নিজেদের মধ্যে জুটি বেঁধে খেলার সুযোগ বেশি না হলেও অদৃশ্য এই বোঝাপড়াই কাল সুবিধা করে দিয়েছিল তাঁদের। ‘দুজনেরই ৫০ টেস্ট হচ্ছে একসঙ্গে। বোঝাপড়া নিয়ে শঙ্কা থাকার কথা নয় আমাদের’—বলছিলেন সাকিব।
শুরুর বিপর্যয়টা পেসার প্যাট কামিন্সের হাত দিয়ে। তবে বাংলাদেশের ৭টি উইকেটই নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্পিনাররা। ব্যাটসম্যানদের জন্য অস্বস্তির হলেও এটা আশা দিয়েছে বাংলাদেশের স্পিনারদের। এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়ান স্পিনাররা সাফল্য পেলে তাঁরা কেন পাবেন না? সাকিব তো বলেই ফেললেন, ‘বল কিন্তু প্রথম থেকেই ঘুরছিল। বিশ্বাস ছিল যে ওদের জন্যও কাজটা কঠিন হবে। আমাদের লক্ষ্য ছিল আড়াই শর মতো রান করা। নাসির, মিরাজ ও শফিউলের ব্যাটিংটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
মিরপুরে টেস্টের প্রথম দিনটা বাংলাদেশের হলেও টেস্টে প্রতিদিনই কিছু না কিছু করতে হয়। ‘কালকে (আজ) একটা নতুন দিন এবং আমাদের আরও ৭টা উইকেট নিতে হবে’ বলে সাকিবও যেন মনে করিয়ে দিলেন সেটাই।

আরও সংবাদ

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা