Skip to main content

সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত পশ্চিম দিকে সজাগ চোখ রাখতে হবে ভারতকে

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

২৯ জুলাই, ২০১৭, ০৪:০১:২১
|
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:২৯:১৩
Nawaz Sharif

নওয়াজ শরিফ।

একটা সূর্যাস্ত হয়েছে। কিন্তু, খুব স্বাভাবিক ভাবে হয়নি। পশ্চিম দিগন্তে অশনি-সঙ্কেত রেখে ডুবেছে সূর্যটা। দিগন্তের ওই পাশে কেমন যেন অস্থিরতার আভাস, স্থিতিটা ন়়ড়ে গিয়েছে আচমকা, টালমাটাল এক সন্ধিক্ষণ। এমন অস্থির সন্ধিক্ষণ পশ্চিম দিগন্তের ও পারে এই প্রথম বার এল, তা নয়। আগেও বহু বার টালমাটাল হয়েছে পাকিস্তান। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বার বার দুর্বল হয়েছে সে দেশে। প্রত্যেকটি অবকাশে না হলেও, অধিকাংশ অবকাশেই বিপর্যয় নেমে এসেছে সে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপরে। আর প্রত্যেক বার সেই বিপর্যয়ের আঁচ এসে লেগেছে ভারতের গায়ে। সুতরাং, নয়াদিল্লিকে এখন অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক চোখে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ইসলামাবাদের দিকে।
নওয়াজ শরিফ আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নন। সে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে দুর্নীতি মামলায় ফৌজদারি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে নওয়াজের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী পদে এবং পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা নওয়াজ শরিফ হারিয়েছেন বলে ঘোষণা করেছে পাকিস্তানি সুপ্রিম কোর্ট। সময় নষ্ট না করে নওয়াজ প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফাও দিয়ে দিয়েছেন। শুরু হয়েছে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর খোঁজ। কিন্তু, গণতান্ত্রিক সংবিধান মেনেই সে প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবে? নাকি রাজনৈতিক নেতৃত্বের দুর্বলতার আভাস পেয়েই কোনও অযাচিত হস্তক্ষেপ সক্রিয় হয়ে উঠবে? প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে পাকিস্তানে, প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে পাকিস্তানের বাইরেও।
নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে ভারত অত্যন্ত উপকৃত হয়, দুই প্রতিবেশীর ভূ-খণ্ড থেকে পরস্পরের দিকে মধুর বাতাস বয়, অখণ্ড শান্তির লালিত্ব বিরাজ করে—  এমন নয় মোটেই। নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই কার্গিলে ভারত-পাক যুদ্ধ হয়েছিল। গত চার বছর ধরে নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি পাকিস্তানের প্ররোচনা বেড়েছে, পঠানকোট-উরিতে জঙ্গি হামলা হয়েছে। সে সব কথা মাথায় রেখেও এ সত্য মানতেই হয় যে অস্থিরতার চেয়ে নওয়াজ শরিফ ভাল, অস্থিরতার চেয়ে যে কোনও গণতান্ত্রিক সরকার ভাল। কারণ ভারত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক যোগসূত্রের সড়কে কোনও সামরিক শাসকের উদ্ধত ছায়াপাত মেনে নেওয়া ভারতের পক্ষে কঠিন।
পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে সামরিক বাহিনীর প্রভাব অপরিসীম। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সামরিক বাহিনী সর্বদা নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় সে দেশে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে গণতান্ত্রিক সরকারকে উদ্যত বন্দুক-সাঁজোয়া গাড়ি ট্যাঙ্ক দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়, উৎখাত করা হয়। বার বার পাকিস্তান সামরিক শাসনে চলে যায়। সামরিক শাসনের সেই পাকিস্তান কিন্তু আরও বিপজ্জনক। গণতান্ত্রিক সরকারের নেতৃত্বকে অনেক দায়বদ্ধতার কথা মাথায় রেখে চলতে হয়, আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার খেয়াল রাখতে হয়। সামরিক সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে সব দায়বদ্ধতার ধার ধারে না। তার দায়বদ্ধতা শুধু ক্ষমতার প্রতি। তাই পাকিস্তান যত বার সামরিক শাসনে গিয়েছে, তত বারই দেশ জুড়ে অস্থিরতা বেড়েছে, সেনার আশ্রয়ে জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়েছে, অবধারিত ভাবে তার আঁচ ভারতের গায়ে লেগেছে। নওয়াজ শরিফ অস্তমিত হওয়ার পর ক্ষমতার রাশ কার হাতে যাচ্ছে, সে দিকে লক্ষ্য রাখা তাই ভারতের জন্য অত্যন্ত জরুরি আজ।
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের দল থেকেই হবেন, নওয়াজের পছন্দের কেউই হবেন। অঘটন না ঘটলে অন্তত তেমনই হওয়ার কথা। কিন্তু রাজদণ্ডের সেই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সামরিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে কি না, পুরোটা এর পরও রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে থাকবে কি না, নতুন প্রধানমন্ত্রী সেনার সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন কি না, এমন নানা বিষয় নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। অতএব, পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক কাঠামোর আকাশে পরবর্তী সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত ভারতকে কিয়ৎ উৎকণ্ঠা নিয়েই অপেক্ষা করতে হবে। সজাগও থাকতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

অবিবাহিত মেয়ের বুকে দুধ, এই ভিডিওটি অবশ্যই একা একা দেখবেন !

টুইন টাওয়ারে ৯/১১ জঙ্গি হামলার ৫টি 'চমকপ্রদ' তথ্য

তৈরি করুন শীতের ভাপা পিঠা