- Get link
- X
- Other Apps
দুই সুখী ‘পুলিশ-মা’
শিশুর মধ্যে এই বোধটা তৈরি করতে ফাতেমাকে সাহায্য করেছেন তাঁর মা, স্বামীসহ পরিবারের সব সদস্য। অনেকে তাঁর কাছে জানতে চান, পুলিশের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তিনি মা হয়েছেন, কেমন সহায়তা পেয়েছেন সবার কাছ থেকে। ফাতেমা জানালেন, ‘যখন গর্ভধারণ করি, তখন গাজীপুরে দায়িত্বে ছিলাম। ওখানে আমার সিনিয়র স্যাররা বিষয়টি জানতেন। আমাকে খুব বেশি মাঠে কাজ করতে হয়নি। পরে ময়মনসিংহে র্যাব-১৪–তে ছিলাম। সেখানেও প্রশাসনিক কাজগুলোই দেওয়া হয়েছে। ফিল্ড থেকে কিছুটা দূরেই থেকেছি। সবক্ষেত্রেই সহযোগিতা পেয়েছি সহকর্মীদের কাছ থেকে। তবে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়া-আসাটা খুব কষ্টকর ছিল।’
সন্তানের ছয় মাস বয়স থেকেই কাজ শুরু করেন মুনমুন। পুলিশের ডিউটিতে রাত-দিন নেই। এমনও হয়েছে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ‘বাবু’ ঘুমাচ্ছে, আবার যখন রাতে বাসায় ফিরেছেন, তখনো সে ঘুমাচ্ছে। এমন অবস্থায় তাঁর সন্তানের পাশে সব সময় ছায়ার মতো ছিলেন আরেক মা, ফাতেমা ইসলামের মা।
‘রোজই সন্ধ্যার পর বাবু বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে, আবার নিজেই বলে আজ হয় মনে হয় মাম্মার অফিস শেষ হয়নি। কিন্তু কখনই অবুঝ হয় না। এত ছোট বাচ্চার এ রকম আচরণ আসলেই আমাকে অবাক করে। সে বুঝে গেছে তার মা কাজে গেছে, আবার আসবে।’
ফাতেমা ইসলাম মনে করেন, চ্যালেঞ্জিং কাজ করলেও সন্তানকে বঞ্চিত করা উচিত নয় কোনো মায়ের। তাঁকে পরিপূর্ণ সময় দিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আর এই সম্পর্ক তৈরিতে পারিবারিক সহযোগিতা খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। বাচ্চার অসুখের সময় তাঁর ডিউটি থাকলে সন্তানকে তাঁর স্বামীই দেখভাল করেন। এ জন্য কোনো অভিযোগও করেন না তাঁর স্বামী। তিনি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। এই বোঝাপড়াটা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কর্মক্ষেত্রে।
২.
কথা হলো আরেক পুলিশ সদস্য ইভানা বারীর সঙ্গে। ২৯তম বিসিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দিয়েছেন তিনি। ছয় বছর ধরে কাজ করছেন। বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে আছেন। তাঁর সন্তানের বয়স এখন চার বছর। মেধা ও শ্রম প্রয়োগ করে আজ এ অবস্থানে এসেছেন তিনি। জানালেন একটি অভিজ্ঞতার কথা।
তখন তিনি গর্ভধারণ করেছেন, ছয় মাস হয়েছে। সে সময়টা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল ছিল সারা দেশ। এমন অবস্থায় একটি মামলার তদন্তে রাতে এক আসামিকে ধরতে গাইবান্ধা যান। গ্রামে অন্ধকার এলাকায় পৌঁছে মূল আসামিকে না পেয়ে ফিরে আসেন তিনি ও তাঁর ফোর্স। তিনি ভাবলেন, পুলিশ ফিরে গেছে এটা জেনে রাতে নিশ্চয় আসামি ফিরে আসবেন। তিনি মনের এই কথা কাউকে জানালেন না। পরে আবার রাত ১১টায় ফোর্স নিয়ে যান ওই আসামিকে ধরতে। এবার আসামিকে পাওয়া যায় বাড়িতে। তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।
তবে সন্তান যে নারীর কর্মক্ষেত্রে বাঁধা নয়—এটা প্রমাণ করতে হলে সামাজিক মনোভাব পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘পরিবার ও কর্মক্ষেত্র থেকে আমি সহযোগিতা পেয়েছি। অনেক নারীই পান না। এটা আমাদের ভাবতে হবে। আমার এই ছয় বছরের চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, অনেক নারী পুলিশ সংসার বা সন্তানের দেখভালের চাপে চাকরি ছাড়তে চান। এমন অবস্থায় ‘বাংলাদেশ পুলিশের উইমেন নেটওয়ার্ক’ তাঁদের সঙ্গে বসেন, কথা বলেন। প্রয়োজনে তাঁদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁদের কাজ করাটা সমাজের জন্য কতটা প্রয়োজন তা বোঝান।
কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মীদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন ইভানা। তিনি বলেন, একটি শিশু কিন্তু কেবল একজন মায়ের সন্তান নয়। একটি শিশু একটি সমাজের দায়িত্ব। তাঁকে বেড়ে উঠতে সাহায্য না করলে তা সমাজের ক্ষতি বয়ে আনবে।
অনেক সময়ই সন্তান কাজে যেতে দিতে চায় না, কান্না করে। এমন পরিস্থিতে একজন মা হয়ে ছেড়ে যাওয়াটা অনেক কষ্টের। ইভানা বলেন, ‘আমার চার বছরের মেয়েকে আমি সব সময় বোঝানোর চেষ্টা করি। আমি তাঁকে বলেছি, ‘মাম্মা’ দেশের জন্য কাজ করে। দেশের জন্য সবার দায়িত্ব আছে। তোমারও আছে। মাকে কাজে যেতে দাও। আমরা সবাই ভালো থাকব। আমার এত ছোট্ট মেয়ে নিজে নিজেই বুঝে নেয়। সে আমাকে সাহায্য করে।’
আরও সংবাদ
বিষয়:
- Get link
- X
- Other Apps
Comments